লাল গাড়িটা পাশেই থামে। এক হাতে স্টিয়ারিং ধরা। অন্য হাতে ডালা খুলে দিলেন। রেজা ভাই আসেন আপনাকে পৌঁছে দিই বলে আহ্বান করেন। আচানক গাড়ি এসে পাশে
থামায় আমি চমকে যাই। ভিতরে ড্রাইভিং সিটে প্রিয় মুখখানা দেখে আমি হো হো হেসে গাড়িতে উঠি। পাশে বসি। প্রিয় মানুষের সান্নিধ্য পেলে সকলে যেমন প্রাণোচ্ছল হয় তেমনি আমরা তখন প্রত্যেকের কুশলাদি বিনিময় করি। সাংবাদিকতা কেমন চলছে। ভালো। আপনার সংগীত চর্চা? উত্তর আসে মনের আনন্দে গাই। আমার পথ ফুরিয়ে গেলে আমি গন্তব্যে নেমে পড়ি। হাত নেড়ে বিদায় জানান তিতু ভাই।
হ্যাঁ তিতু ভাই। রশিদ আহমেদ তিতু। একজন সংগীত শিল্পী। কিংবদন্তি শিল্পী মান্না দে’র একজন একান্ত ভক্ত।

ফরিদপুরের বিভিন্ন মঞ্চে ও সুধীমহলের আড্ডায় দরদী কন্ঠে গাইতেন মান্না দে’র গান তিনি। ফরিদপুরের শহরের ২ নং কুঠিবাড়ির মিশন হাউজের পার্শ্ববর্তী একই এলাকায় বাসা হলেও পরম শ্রদ্ধেয় তারাপদ স্যারের মাধ্যমে এ গুণী শিল্পীর সন্ধান পাই। একদিন শ্রদ্ধাভাজন প্রফেসর আলতাফ হোসেন স্যারের সাথে তিতু ভাই’র বাসায় এক গানের আসরে গিয়ে দেখি অসংখ্য গুণীন মানুষের সমাবেশ।

নিরহংকারী, প্রাণোচ্ছল, তরতাজা এ ভালো মানুষটি সকলকে মান্নাদের গান গেয়ে মোহিত করতেন। বড়ই ভালোবাসি ভাই আপনাকে।

দুই বছর হলো আপনি চলে গেছেন।আজ আপনার ২য় মৃত্যুবার্ষিকী।

শিক্ষিত, মার্জিত ও রুচিসম্মত এক বনেদি পরিবারের সন্তান ছিলেন রশীদ আহমেদ তিতু। পিতা ছিলেন ফরিদপুর পৌরসভার সম্মানীয় চেয়ারম্যান রকিবউদ্দিন আহমেদ। মাতা পরম আদর্শ ও শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষিকা লায়লা চৌধুরী।

তাঁর একান্ত প্রাণের মানুষ ছিলেন স্ত্রী ফারাহ দিবা আহমেদ। সব অঙ্গনেই তাদের কাপল উপস্থিত, সৌহার্দ্য ও আতিথিয়েতা সকলকে মুগ্ধ করত। বড়ই ম্লান হয়েছে গেছে আনন্দ ফোয়ারার হাসি ফোটানো দিবা ভাবীর সেই সহাস্য বদন। যেন সব হারা এক চাতক পাখি।

পারিবারিক সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বড় হওয়া তিতু ভাই একান্ত ঘনিষ্ঠ ও পরিচিত ছিলেন ফরিদপুরের সরব ও সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক অঙ্গনে।

একজন প্রগতিশীল ও মুক্তমনা সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে তিনি থাকবেন সাংস্কৃতিকজনের হৃদয় জুড়ে।

আর পরিশীলিত সাংস্কৃতিক চর্চার মানুষের সাথে থাকে আমার আত্মার সংযোগ। তিতু ভাই আছেন আমার আত্মার সেই সংযোগে।

আজ এই প্রয়ান দিবসে তাঁর বিদেহী আত্মার প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

তাঁর পরিবার ও পরিজনের সকলেই আমার পরিচিত। তাঁরা নমস্য।

পরপারে ভালো থাকুন তিতু ভাই।🙏

✅লেখক:সাংবাদিক ও শিক্ষক
১৪ মে,২০২২।
ফরিদপুর।